Wednesday 5 August 2020

' *ধর্ম, বিজ্ঞান ও কুসংস্কারের নীরিখে অতিমারী কোভিড-19'*



                   'ধর্ম যখন বিজ্ঞান কে বলে রাস্তা ছাড়ো! বিজ্ঞান কি রাস্তা ছেড়ে দেয়?' কবি বিরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এই কবিতার লাইনটা বর্তমান সময়ের নীরিখে খুবই প্রাসঙ্গিক আজ। সত্যিই 'রাস্তা কারও একার নয়।'  এক অপ্রতিরোধ্য ভাইরাস,যা প্রথমে মহামারী তারপর অতিমারীর রুপ ধারণ করে সারা দুনিয়াকে ছেয়ে ফেলে,ভয়াবহতার সৃষ্টি করেছে বলা যায়। তাই ধর্ম ও বিজ্ঞান এই ভাইরাস কে নিয়ন্ত্রন করবার এবং চিরতরে মুছে ফেলবার চেষ্টায় রত, বলা যায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ প্রবন্ধ লেখা পর্যন্ত এই অতিমারী দাবানলের মতো প্রায় 210 টি দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে। গোটা বিশ্বে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় 1 কোটি 33 লক্ষ 44 হাজার 159 জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন প্রায়  5 লক্ষ 77 হাজার 944 জন মানুষ।বলা যায় একটা অতিক্ষুৃদ্র ভাইরাসের কারণে মৃত্যু আজ হোলি খেলায় রুপান্তরিত। এর শেষ কোথায়,উত্তরটা সকলেরই অজানা। সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যাটা শেষমেষ কোথায় পৌঁছতে পারে কোনো বিশেষজ্ঞ,বৈজ্ঞানিক কিংবা কম্পিউটার মডেল আজ বলতে ব্যার্থ। এই প্রবন্ধে সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে,বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের দেওয়া তথ্যাদির ভিত্তিতে 'ধর্ম', 'বিজ্ঞান' ও 'কুসংস্কার' এর নীরিখে অতিমারী কোভিড-19 এর বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। 'ধর্ম' বলতে বোঝায় যা আমাদের ধারণ করে।আর এই বিশ্ব প্রকৃতিতে প্রত্যেকটি বিষয়েরই একটি নির্দিষ্ট ধর্ম বা গুণাবলী রয়েছে। আগুনের ধর্ম উত্তাপ, জলের ধর্ম তরল্য,শৈত্য ও সমুচ্চশীলতা বজায় রাখা। আর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ আমাদের ধর্ম হল মানবতা। সে যাইহোক সৃষ্টির শুরু থেকেই বিশ্বপরিবেশে 'ধর্মের' বিষয়ে মতবাদ ভিন্ন এবং তাই তার শ্রেনীবিভাগও রয়েছে হাজার। তা নানা মত, নানা পরিধানের দেশে সবাই যে যার ধর্মের প্রতি নিষ্ঠাশীল এবং সংস্কার রীতি বজায় রাখতে যত্নশীল ও যথেষ্ট বদ্ধপরিকর। এবার আসি বিজ্ঞানের বিষয়ে, 'বিজ্ঞান' সারাজীবনই তথ্য,প্রমান,গবেষণা এর ভিত্তিতেই বিশ্বাসী ও আস্থাশীল। এ পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক, কিন্তু 'কুসংস্কার', যা সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে মধ্যযুগ পেরিয়ে এই একবিংশ শতাব্দী, এই অতিমারীর মতোই অপ্রতিরোধ্য ও অপরিবর্তনশীল।বিশ্ব পরিবেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আমাদের রীতিমত অবাক ও শঙ্কিত হতে হয়। এক দিকে অতিক্ষুদ্র ভাইরাস আর তারই সাথে ঘটে যাওয়া একের পর এক বিপর্যয়ে শঙ্কিত আজ পৃথিবী মাতৃকা,শঙ্কিত আমরা।বিপর্যস্ত আজ স্বাভাবিক জনজীবন।চেনা পৃথিবীর রুপ,রং,বর্ন সবই পরিবর্তিত।'গৃহবন্দি' থাকতে থাকতে আমরা রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছি; একটু মুক্তি চাই।আবারও ওই খোলা আকাশটার নীচে দাঁড়িয়ে প্রাণভরা নিঃশ্বাস নিতে উদগ্রীব মন আমাদের। কিন্তু কোথায় সে মুক্তির পথ? 'ধর্ম' না 'বিজ্ঞান' কে দেবে মুক্তি।উত্তরটা অজানা।আমরা যারা স্রষ্টায় বিশ্বাসী,সেই পরমপিতার কাছেই প্রার্থনারত।আর বিজ্ঞান তার মত করে চেষ্টায় রত।'হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন', ' রেমডেসেভির' কখনও 'প্লাজমা থেরাপি' কিংবা 'ব্রায়োনিয়া অ্যালবা', 'আরসেনিকাম অ্যালবাম' আবার কখনও সেই ভারতীয় আয়ুশমন্ত্রকের পরামর্শ সবই আজ বৃথা।বিশ্ব সাস্থ্যসংস্থা স্বীকার করে নিয়েছে ভ্যাকসিন্ ছাড়া বিকল্প আর কিছু নেই।তাই এই অতিমারী কে ঠেকাতে সব দেশের বিজ্ঞানীরা নিজেদের করেছে ব্যস্ত।অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরী প্রতিষেধক(ChAdox1 ncov-19) চূড়ান্ত পর্যায়ের ট্রায়াল কিংবা মার্কিন বহুজাতিক সংস্থা 'ফাইজার' ও জার্মান সংস্থা 'বায়োনটেক এসই', ভারতের হাইদ্রাবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা 'ভারত বায়োটেক' এর তৈরী 'COVAXIN' এবং গুজরাটের আহমেদবাদের ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা 'জাইডাস ক্যাডিলার' 'Zycov-D' এর হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করেছে। আর তারই মাঝে সব সম্ভবনা কে দূরে ঠেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভ্যাকসিন্ কে বাজারজাত করতে উদ্যোগী হয়েছে রাশিয়া।এদিকে এই কোভিড কে বাতাসে ভাস্যমান ভাইরাস হিসাবে স্বীকারুক্তি এবং আবারও উদ্বেগজনক ঘোষণা করেছেন বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার প্রধান ট্রেডস্ আ্যাডহানোম গ্যাব্রিয়েসাস। তাঁর মতে 'ওল্ড নর্মাল' এ ফেরা কোনোমতেই সম্ভব নয়, এখন ' নিউ নর্মাল-ই ' ভবিষ্যৎ। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা যখন আশাহীন তখন আমরা অর্থ্যাৎ সাধারণ মানুষ এর অবস্থান টা ঠিক কি।মাস্ক পড়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, সাস্থ্য বিধি মানা এসব তো দূর, আমরা এই মারণ ব্যাধির বিরুদ্ধে রীতিমত পুতুল খেলায় রত। তা নাহলে কখনো কাঠ কয়লার টিকা,কখনো গোমুত্র পান,কিংবা হনুমান চল্লিশা পাঠে করোনা মুক্তি,অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার্ এর বদলে অ্যালকোহল্ পান করে কিংবা শরীরে ছড়িয়ে চির অন্ধকারের যুগে ফিরে যাবার চেষ্টা করে যাবার কোনো যুক্তি ছিল না। এই ভাইরাসের ভয়াবহতা কমাতে পারে 'গাজা-ভাং',আমেরিকার নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় ও ট্রেক্সাস বায়োমেডিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দেওয়া তথ্য আধুনিক বিজ্ঞানের পরিসর কে কতটা বাড়াতে পেরেছে জানা নেই,তবে একশ্রেণীর মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিয়ে আরও নেশা করার প্রবণতা কে বাড়িয়ে দিয়েছে বলায় যায়। তবুও অবশেষে বলি, সব ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে, অন্ধকার কে পিছনে ফেলে আশার আলোর সন্ধানে আমাদের হতে হবে 'চরৈবেতি' মন্ত্রে দীক্ষিত।                                           
  ~ সুমন ঘোষ

সুশান্ত সিংয়ের উদ্দেশ্যে

প্রিয়
       সুশান্ত,                                                                                
               
                  হয়তো ভালো আছো অজানা কোনো   দেশে। আজ তোমায় কিছু কথা বলার আছে,জানি নক্ষত্রের আড়ালে থেকে তুমি শুনছো। "Life and Death,it is not in our hand, we can decide how to live our Life" সারাজীবন মনে থাকবে তোমার এই শেষ বলা কথাটা।না এটা কোনো ডায়ালগ্ নয়,এটা জীবনাদর্শ,যা তুমি প্রমান করেছো নিজের জীবনে।নইলে বিহারের পাটনা থেকে স্বপ্নের শহর মুম্বাই, সফরটা তো সোজা ছিল না। কতজন পারে বলোতো নিজের প্যাশনের জন্য নামি ইঞ্জিয়ারিং কলেজ,ডিগ্রি,উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে পিছনে ফেলে এরকম সংগ্রাম করতে।সব অনিশ্চয়তাকে সাফল্য দ্বারা নিশ্চিত করতে,কজন পারে।আজ রিলিজ হল তোমার শেষ মুভির ট্রেলর্ টা,আমরা তোমার অনুসরণ কারীরা আজ ভীষণ কেঁদেছি, সত্যিই' দিল্ আজ বড্ড বেচারা' আমাদের।তোমার প্যাশন আজ আমাদের শূন্যতা দেয়নি বরং পরিপূর্ণ করেছে। তারা খুঁজতে খুঁজতে তারার দেশে কেন হারিয়ে গেলে বলো তো?জানি অভিমান হয়ে ছিলো। তবু কেনো? বুঝি,এই উত্তর টা আর কোনোদিনই পাব না। 'সত্যিই "জন্ম,মৃত্যু আমাদের হাতে থাকে না।কিন্তু কিভাবে বাঁচব সেটা আমরাই ঠিক করি।" সিলভার স্ক্রিনে এই বলা কথাটা বার বার শুনতে চাই আমরা।দেখতে চাই ওই ভুবন মাতানো হাসিটা বারবার। আর বলব- "ভালো আছি,ভালো থেকো,আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।" পারলে ফিরে এসো,অন্য নামে,অন্য কোনো স্থানে। তোমায় সারাজীবন এই ভাবেই মনে রাখব।
                                                               
                                                         

                                                        ইতি---
                            তোমার এক অনুরাগী ভক্ত                               
                                        সুমন ঘোষ

"একাকিত্বের অভিশাপ"



সুশান্ত সিং যেদিন আত্মঘাতী হল সেদিন মনটা ভীষণ ভার ছিল অনিতার, সবার মতো কি   না জানি না, তবে ও একটু বেশিই ভেঙে পড়েছিল, মনে পড়ে যাচ্ছিল ডিপ্রেশনে থাকা কালীন তার জীবন যুদ্ধের কথা গুলো। না, কিছু কথা বলা হয় না, রয়ে যায় অধরা। বাচিক শিল্পী রুপে সেদিনও অনুরোধ আসছিল তার কাছে  সদ্য যোগ দেওয়া একটা ইউটিউব চ্যানেলের গ্রুপ থেকে। কিন্তু আজ যে বাধ ভাঙা অশ্রু নেমেছে তার দুচোখ দিয়ে, জীবনের চলার পথ যে সোজা নয়, প্রতিটি পদক্ষেপে সমালোচিত হতে হয়, লাঞ্ছিত হতে হয়, সবই জানে সে, কিন্তু বার বার মনে হতে থাকে লড়াইটা শেষ করি এবার, আরও একটা সুশান্ত সিং এর গল্প তৈরী হোক না, অসুবিধা কোথায়? ভাবল অনিতা। জীবন টাকে উপন্যাস কেন হতে হবে, ছোটগল্প ই থাক না। হয়তো সেদিন আরও কিছু ঘটত, কিন্তু তখনই মুঠো ফোনটা বাজল, ফোন টা ধরেই শুনল একটা স্বর , না পরিচিত নয়। ক্ষণিকের জন্য সব ভুলে গিয়ে  কল্ টা রিসিভ্ করার পর, দেখল শান্তনু দা বলছে ,'ওপার থেকে কিরে চিনতে পারলি না তো? ' ' আমি জানতাম তোর মন খারাপ।অনিতা এখন রোজ রাতে একাই থাকে,লেখালিখির শখ তাই বাড়ির কেউ এই নিয়ে কিছু বলে না। কিন্তু ওরা বোধ হয় জানতেও পারে না, একাকিত্ব আর অবসাদে ঘেরা একলা রাত গুলোর কথা। আজ হয়ত সব শেষ হতো, শান্তনু দা ফোন না করলে। শান্তনু দার সাথে পরিচয় ওই লেখালিখি, আবৃত্তি এর মাধ্যমেই, তবে সেদিন যেন মানুষটা কিছু আন্দাজ করেছিল, সবার অজান্তেই তার এই অবসাদ গ্রস্ত মন আর মেকি হাসি দিয়ে ঘেরা একটা মানুষ এর বাইরে একাকিত্ব আর বিষাদে ভরা জীবনের সন্ধান পেয়েছিল, জানিনা কিভাবে। সেদিন মানুষটার কাছে একটা শিক্ষা মিলেছিল, না আত্মঘাতী দ্বারা জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়া যায় না, এটা সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ নয়, লড়াই করে, সব অবসাদকে দূরে ঠেলে আমাদের বাঁচতে হয়। সেদিন নিজেকে নতুন ভাবে চিনেছিল অনিতা, আজ বুঝেছিল জীবনটা সিনেমা নয়, নয় কোনো সস্তা পুতুল খেলা।


প্ল্যানচেট





একে শ্রাবণ সন্ধ্যা, তার ওপর মুষলধারে বৃষ্টি, চারিদিক অন্ধকার আর ঘন কালো মেঘে ঢেকে এসেছে আকাশটা। প্রতিদিনের মতো পাড়ার ক্লাবে সান্ধ্যকালীন আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছে। লোডশেডিং হয়ে গেছে বৃষ্টি নামার আগে থেকেই।তা প্রায়শতই সুদীপ আসে না ক্লাবে, অফিসের কাজ,লেখালিখি, তারপর বাড়ির কাজ এই সব নিয়ে তার ব্যস্ত জীবন।আজ এত বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় দিয়ে তাকে আসতে দেখে পাড়ার ছেলেরা তো ভীষণই অবাক। সুদীপ ভেজা ছাতাটা ক্লাবের বারান্দায় গুটিয়ে রেখে, একটু গলা ঝাকানি দিয়ে ঢুকল  ক্লাবের ভিতরে। আর ঢুকতেই পাড়ার বিশ্বম্ভর দাদু একটু মসকরা করে বলল, 'কি হে ছোকরা আজ হঠাৎ এখানে, তোমার তো আজকাল টিকি মেলাভার।' সাথে পল্টু,কানাই,শ্যামল,রাহুল শ্যাম দা,শুভ দা সবাই অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে,যেন ভূত দেখছে তারা। সুদীপ এবার মুখ খুলল, ' কেন আসতে পারি না কি ক্লাবে, আজ একা ভালো লাগছিল না,তাই---' সুদীপ এর এ হেন কথা শুনে সবাই একটু দুঃখ বোধই করল। কারণ সবাই কমবেশি  জানে সুদীপের নিজেকে ব্যস্ত রাখার নামে সবার থেকে আলাদা করে নেওয়ার কারণটা। সে যাইহোক, রহিম চাচা বলল, ' কেন যে সবাই মিলে তোমরা ছেলেটা অপ্রস্তুতিতে ফেলছো জানি না, জানো তো ওর বিষয় টা। তা সুদীপ বসতো বাবা বস্। আজ বরঞ্চ একটা গল্প শোনা তো আমাদের।' এই প্রস্তাবটা রহিম চাচা রাখার সাথে সাথেই সবাই তাতে সায় দিল। পল্টু বলল,' দাদা, একটা গল্প হয়ে যাক না,অনেক দিন গল্প শুনিনি তোমার কাছে'। সুদীপ প্রথমটাই আপত্তি করলেও বিশ্বম্ভর দাদুর কথাটা ফেলতে পারল না। আর মনে মনে ভাবল আজকাল কার যুগে আর গল্প শোনা, গল্প লেখা এসব এর চল নেই বললেই চলে। সবাই তো ব্যস্তই থাকে মুঠো ফোনে। সেই যাই হোক সুদীপ সবার অনুরোধে গল্প আরম্ভ করল। এটাকে ঠিক গল্প বলা চলে না, সেদিন সন্ধ্যায় আমরা যেটা শুনেছিলাম,আজও মনে পড়লে----। যাই হোক ফিরে আসি সুদীপের কথায়। সুদীপ বলল, আজ তোমাদের বলব প্লানচেট কে কেন্দ্র করে একটা ঘটনা, তা তোমরা জানো তো প্লানচেট কি?' সুদীপের প্রশ্নের উত্তরে কানাই বলল, 'সে আর নতুন কি দাদা,অনেক বার শুনেছি,দেখেছি সিনেমাতেও।' সাথে বিশ্বম্ভর দাদু ও বলল, ' হ্যাঁ, অবশ্যি শুনেছি। সে আর্য যুগ থেকেই শোনা যায় এর কথা। আমাদের রবীন্দ্রনাথ থেকে আব্রাহাম লিঙ্কন সবাই তো প্লানচেট করতেন। শোনা যায় রবীন্দ্রনাথ প্লানচেট করে তাঁর প্রিয় কন্যা ও পুত্রদের সাথে কথা বলতেন। তার মধ্যে ছিল তাঁর প্রিয় কনিষ্ঠপুত্র শমিন্দ্রনাথ,জ্যোষ্ঠ কন্যা মাধুরীলতা,সতেন্দ্রনাথ প্রমুখরা। বড্ড ভালোবাসতেন কিনা শমিন্দ্রনাথ কে রবীন্দ্রনাথ। তাই বারবার ডাকতেন শমিন্দ্রের আত্মাকে। মিডিয়াম ছিল উমাদেবী। সেই যাইহোক, তা তোমার ঘটনাটা ঠিক কি বলতো?' বিশ্বম্ভর দাদু প্রশ্ন করল। আর এদিকে সবাই তখন একে অপরের খুব কাছাকাছি এসে বসেছে। আর বাইরে তখন অঝোরে বৃষ্টি, ঘরে মোমবাতিটা নিভব নিভব অবস্থা।বার বার বিদ্যুৎ এর আলোয় ঘরটা ঝলমলিয়ে যাচ্ছে।সুদীপ বলতে শুরু করল ঘটনাটা, ' তা তোমরা তো সবাই জানো কবিতার কথাটা। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল সুদীপ। আমিও বুঝিনি হঠাৎ ও আমায় ছেড়ে চিরদিনের মতো চলে যাবে। তখন আমি কলকাতার একটা অফিসে কাজ করি, আর ওখানেই দেখা কবিতার সাথে। কি একটা বিশেষ কাজে এসেছিল আমাদের অফিসে। তো এভাবেই প্রথম দেখা,তারপর প্রেম আর সবাইকে না জানিয়ে বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। কবিতা থাকত শ্যামবাজার স্ট্রিটের একটা ফ্লাটে, ওর পৈতৃক বাড়ি উদয়নারায়ণ পুরে। এইখানে একটা পত্রিকার অফিসে কাজ করত।বেশ চলছিল সব। আমিও অফিস শেষে ওর বাড়ি যেতাম, সপ্তাহের শেষে এক আধবার বাইরে ঘুরতে যেতাম। ও বেশ হাসি খুশিই থাকত। কিন্তু হঠাৎ সব কেমন জানি বদলে গেল কবিতা। মুখে হাসি নেই,চিন্তাগ্রস্ত থাকত। জিজ্ঞাসা করলেও কিছুই বলত না।বেশকয়েক বার সাইকোলজিস্টেও দেখিয়ে ছিলাম, কিন্তু কিছুই পরিবর্তন হয়নি। বাধ্য হয়ে আমিই একটা কাজের লোক,বলা যায় ওর দেখাশোনা করার লোক রেখেছিলাম।সে ও বলত স্যার ম্যাডাম খাবার,ঔষুধ কিছুই খেতে চাই না।আমিও যেতাম মাঝে মধ্যেই দেখা করতে,ওকে বোঝাতাম। কিন্তু ইদানিং ও আমার কোনো কথায় শুনত না। তারপর যা ঘটেছিল সেটা তোমরা সবাই জানো।কবিতা র মৃতদেহ টা পাওয়া গিয়েছিল নিচের বেসমেন্টের সামনে। পুলিশের অনুমান ছিল আত্মহত্যা। যেদিন ঘটনাটা হয় ও আমায় ফোন করেছিল, কিছু একটা বলতে চাইছিল। আমায় শুধু বলেছিল সুদীপ তাড়াতাড়ি এসো আমার ভয় লাগছে,গিয়েও ছিলাম ওর ফ্ল্যাটে,কলিং বেলটা বাজাতে যাব,শুনলাম এক বিকট চিৎকার আর নিচে গিয়ে দেখি কবিতা।কিন্তু, ততক্ষণে সব শেষ, কবিতার মাথা থেতলে গেছে, রক্ত  ভেসে যাচ্ছে মেঝেটা। আমার মাথায় কিছুই আসছিল না, শুধু একটা কথায় মনে আসছিল কবিতা তুমি এটা ঠিক করলে না। এভাবে---' সুদীপের গলা ততক্ষণে ভারী হয়ে এসেছে, চোখগুলো ছলছল করছিল, বিদ্যুতের আলোয় স্পষ্ট দেখলাম আমরা সবাই। পল্টু বলল, 'দাদা তারপর কি হল?' সুদীপ একটু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'তারপর পুলিশ তদন্ত শুরু করল, আমায় ঘন্টার পর ঘন্টা জেরা করতে লাগল। কবিতাকে নিয়ে হাজারো প্রশ্ন করেছিল। তারপর বেশ কয়েক মাস কেসটা চলার পর, আত্মহত্যা হিসাবেই বন্ধ হল সবটা। আমিও সব ছেড়ে ছুড়ে  কলকাতা থেকে একেবারে চলে এলাম এখানে, ওই অফিসের ম্যানেজারই আমার বদলির ব্যবস্থাটা করে দিয়েছিল। কিন্তু আমি আজও ওর মৃত্যুটা মেনে নিতে পারলাম কই। ভীষণ মিস্ করতাম ওকে, ও আমার সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল যে।তা একদিন অফিসের এক সহকর্মী রমেশ আমায় প্লানচেটের কথাটা বলল। সব শুনে আমিও রাজি হয়ে গেলাম। কতদিন পর কবিতার সাথে কথা হবে,ভীষণ আনন্দিত হলাম। তা রমেশই প্লানচেট সংগ্রহ থেকে যা যা লাগে সবই করল। আমিও বসলাম একাকী ঘরে সেদিন। চারিদিক চুপচাপ,নিস্তব্ধ রাত্রি,বাইরে বাঁকা চাঁদটা মেঘের আবরণে ঢাকা। একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে আমি ঘরে একা, কবিতার কথা একমনে ভাবছি, আর অপেক্ষা করছি কখন কবিতা আবার সুদীপ বলে ডাকবে।বেশ কিছক্ষণ এইভাবেই কাটল,আমি তখনও আশা ছাড়িনি, হঠাৎ শীত শীত অনুভূত হল,বুঝলাম ঘরের তাপমাত্রা কমছে ধীরে ধীরে। একটা শব্দ হল হঠাৎ। তাহলে কি কবিতা এল। হ্যাঁ একেবারে তাই, কবিতাও যেন এতদিন ধরে এইসময়টার জন্যই অপেক্ষা করছিল। কবিতা বলল, ' সুদীপ কেমন আছো? জানি ভালো থাকা সম্ভব নয়। আমিও ভালো নেই।' এতদিন দিনপর কবিতার সেই চেনা আওয়াজ নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না। আমি কিছু বলতে যাব, কবিতা বিষন্ন গলায় বলল, ' সেদিন তোমায় কত করে ডাকতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু ওই নর রাক্ষস গুলোর ভয়ে পারিনি। আর তুমিও একবার খেয়াল করলে না আমায়,আমি তোমার পাশ দিয়েই চলে গেলাম।'তখন আমার মনে পড়ে গেল সেদিনের ঘটনাটা আবার, হ্যাঁ তাই তো, আমি লিফ্টে থেকে নেমে তোমার রুমটার দিকে যাব মনে হয়েছিল কেউ যেন লিফ্টের দিকে গেল। কিন্তু আমি তোমার কথা ভাবতে ভাবতে একবারও খেয়াল করিনি।কিন্তু সেদিন ঠিক কি হয়েছিল বলতো আমায়,তুমি কেন আত্মহত্যা করলে,পারলে আমায় একা রেখে যেতে।' কবিতা বলল, ' না আমি আত্মহত্যা করিনি,  ওই নরখাদক গুলো র হাত থেকে আমি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়েই---' আমি বললাম, 'কি হয়েছিল,কারা ছিল এরা?কারা তোমায় মারতে চেয়েছিল?কেন?' কবিতা ভারাক্রান্ত গলায় বলল, 'ওরা টিনু দালালের লোকছিল, একটা জমি নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল আর এই বিষয়টা নিয়ে আমি একটা ইডিটরিয়াল লিখেছিলাম মনে আছে তোমার?' আমি বললাম,'হ্যাঁ'। তারপর- কি হয়েছিল?' কবিতা বলল,তার পর থেকেই আমায় রীতিমত হুমকি,প্রাণে মেরে ফেলার ভয় সব দেখানো হচ্ছিল। আমি ভয় পায়নি,কিন্তু যখন ওরা তোমার ক্ষতি করবে বলল,আমি পত্রিকা অফিস ছাড়তে বাধ্য হলাম। কিন্তু ওরা আমার পিছু ছাড়ল না। আমি তোমায়ও কিছু বলতে পারলাম না, আর ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। কিন্তু সেদিন আমি তোমায় সব বলব বলেই ফোণ করে আসতে বলেছিলাম। কলিং বেল টা বাজল,আমি ভাবলাম তুমি। দরজা খুলতেই ওরা ঘরে ঢুকল। আমায় জোড় করে বিছানায়,তারপর  আমায় ছিঁড়ে খেল ওরা, আমি ওদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতেই লিফ্টে করে নিচে নেমে তোমার কাছেই আসব ভেবেছিলাম। কিন্তু তা আর হল কই?' কবিতাকে থামিয়ে দিলাম আমি,ভীষণ অপরাধী লাগছিল নিজেকে, মাথায় করাঘাত করতে লাগলাম, কেন আমি আগে পৌঁছালাম না,কেনই ওকে খেয়াল করলাম না লিফ্টের গেটে। 'আর এই ছিল ঘটনা, আর তারপর থেকেই এই মাঝেমধ্যে এইভাবেই ওর সাথে কথা হয়।' সুদীপ শেষ করল। আমরা সবায় কি বলব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম। বিশ্বম্ভর দাদু কিছু বলতে যাবে--- সুদীপ থামিয়ে দিয়ে বলল,'না আজ উঠি, আমার কবিতার আসার সময় হল।' ততক্ষণে বৃষ্টি প্রায় থেমে গেছে। দূরে শোনা যাচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।